Monday, 7 November 2016

গরুর ক্ষুরা রোগের লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

ক্ষুরা রোগ

ইহা সকল বয়সের গরু-মহিষ ছাগল-ভেড়ার ভাইরাসজনিক একটি মারাত্মক অতি ছোঁয়াছে রোগ

A disease which spread out by the virus
Fig: গরুর ক্ষুরা রোগ-001

A virus related cattle disease
Fig: গরুর ক্ষুরা রোগ-002

লক্ষণ

** গরুর শরীরে প্রচন্ড জ্বর হয় দেহের তাপমাত্রা ১০৬ ডিগ্রী পর্যন্ত হতে পারে
**  
আক্রান্ত পশুর মুখ নাক দিয়ে লাল ঝরতে থাকে এবং তা দড়ির মত ঝুলতে থাকে 
**  
গরু নির্জীব হয়ে যায় এবং কোন কিছু খেতে চায় না
**  
দুধ দেওয়া গরু হলে দুধের পরিমান কমে যায়
**   
মুখের ভিতর ছোট ছোট পানি ফোস্কা পড়ে এই ফোস্কাগুলো পরবর্তীতে মিশে গিয়ে বড় ধরনের ক্ষতের বা ঘাযের সৃষ্টি করে
**   
পানির মত ফোস্কাগুলো ২৪-৪৮ ঘন্টার মধ্যে ফেটে যায় ফেটে লাল দগ দগে ঘা হয় এবং জিহবা উপরের চামড়া উঠে যায় 
**   
গরু খোড়াতে শুরু করে খেয়াল করলে দেখা যাবে যে ক্ষুর চামড়ার সংযোগ স্থলে পানি ফোস্কা ঘা হয়  মনে হয় ক্ষুরটা খসে পড়েছে গরুর পায়ের ক্ষুরগুলো অসাভাবিক লম্বা হয়ে যায় তখন দেখা যায় গরু ঠিকভাবে হাঁটতে পারেনা 
**   
দুধ দেওয়া গাভী আক্রান্ত হলে গাভীর বাটের উপরে বা পাশে ছোট ছোট পানি ফোস্কা পড়ে তার পরে  ঠুনকো রোগ হয় এবং বাঁট থেকে দুধ বের হয়ে  আসে 
**   
সপ্তাহ খানেক  পর্যন্ত গরু কিছু খাবার খেতে পারে না শরীরের ওজন কমে যায়
**   
দুধালো গাভীর দুধ দেয়ার ক্ষমতা কমে যায় 
**   
গর্ভবতী গাভী রোগে আক্রান্ত হলে অনেক সময় বাচ্চা গর্ভপাতের ফলে নষ্ট হয়ে যায়
**   
হালের বলদ আক্রান্ত হলে গরুর কার্য ক্ষমতা কমে যায়  
**   
গায়ের লোমগুলো অস্বাভাবিক লম্বা হয়ে যায়
রোগের বিস্তার বা সংক্রামন এক পশু থেকে অন্য পশুতে যেভাবে হয়ে থাকে তা হলঃ
রোগে আক্রান্ত পশুর মুখ দিয়ে প্রচন্ড লালা ঝরে লালার সাথে রোগের ভাইরাস বেরিয়ে আসে লালা যেখানে পড়ে সেখানে ধুলিকনার সাথে মিশে বাতাসে উড়ে বেড়ায় এবং বাতাসের গতি যে দিকে থাকে সেদিকে সংক্রামিত হতে থাকে
***   
আক্রান্ত প্রানীর সাথে সুস্থ প্রানী রাখলে বা সংস্পর্শে আসলে সুস্থ প্রানীটিও আক্রান্ত হয়
***  
আক্রান্ত প্রানীর যারা সেবা বা দেখাশোনা করেন তাদের মাধ্যমেও রোগটি ছড়ায়
***   
রোগাক্রান্ত মৃত প্রানী যেখানে সেখানে ফেলে দিলে মৃত প্রানীর দেহ মাটির সাথে মিশে গিয়েও রোগটি ছড়িয়ে থাকে
***   
আক্রান্ত গাভীর দুধ যখন তার বাছুর খায় তখন দুধের মাধ্যমে বাছুরে রোগটি সংক্রামিত হয়
ক্ষুরা রোগের চিকিৎসা সম্বন্ধে আমাদের দেশে সাধারন মানুষের মধ্যে কিছু  ভ্রান্ত ধারনা রয়েছে যা রোগে আক্রান্ত পশুর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এমন কি এর জন্য অনেক আক্রান্ত পশু সহজেই মারা যায় ভ্রান্ত ধারনাগুলো হল
***   
এই রোগে আক্রান্ত হলে গরুকে কাদায় দাঁড় করিয়ে রাখতে হবে
***  
অনেক সময় গরুর গলায় মাদুলি ঝুলিযে রাখলে এই রোগ সেরে যাবে
***   
মনে করা হয় খারাপ বাতাস লেগে এই রোগ হয়
***   
এই রোগ হলে গোয়ালে ধোঁয়া দিলে এই রোগ সেরে যায়

সুতরাং রোগে আক্রান্ত হলে উপরের বর্ণিত কাজগুলো কোনভাবেই করা যাবে না এবং আশে-পাশের কেউ যাতে না করে তার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলো হল

#    গরুকে নিয়মিত টিকাকরণ করাতে হবে 
#  
গরুর বাছুরর বয়স যখন মাস হবে তখন তাকে ক্ষুরা রোগের প্রথম টিকা দিতে হবে তারপর মাস পর পর নিয়মিত ভাবে টিকা দিতে হবে
#   
গাভীন গরুকে টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, মাস গর্ভকালীন অবস্থায় থাকা পর্যন্ত টিকা দেওয়া যায়
#   
রোগ যদি কোন গ্রামে বা গোয়ালে হয় তবে অসুস্থ গরুগুলোকে আলাদা করে রাখাতে হবে  
#   
রোগে আক্রান্ত গরুর খাবারের পাত্রগুলো সুস্থ গরুর জন্য যাতে ব্যবহার না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে 
#   
অসুস্থ গরুর যিনি সেবা করেন তিনি যেন সুস্থ্য গরুর কাছে না যান 
#   
অসুস্থ গরু যেন হাটে কেনা-বেচা না হয়  তার জন্য স্থানীয়ভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে
গরু আক্রান্ত হলে প্রতিকার হিসেবে যে সকল কাজগুলো আমাদের করতে হবে 

#    
যে খামারে যখন রোগটি শুরু হয়ে যায় তখন কাপড় কাচা সোডার % জলীয় দ্রবন তৈরি করে গোয়াল ঘরে ছিটাতে হবে তাহলে রোগের ভাইরাস মিনিটের মধ্যে মরে যাবে 
#    
সোহাগা গরম কড়াইয়ে ভেজে নিয়ে তারপর পাটায় বেটে নিতে হবে এরপর  মধু দিয়ে অথবা গ্রাম সোহাগায় ২০ মিলিলিটার গ্লিসারিন এবং ৪৮০ মিলিলিটার পানি মিশিয়ে দ্রবন তৈরি করে গরুর মুখে দিনে - বার মাখাতে হবে 
##   
পায়ের ঘায়ের জন্য লিঃ পানিতে গ্রাম পটাশিয়াম পারমাঙ্গানেট মিশিয়ে পানি দিয়ে গরুর ক্ষুর ভাল করে ধুয়ে নরম কাপড় দিয়ে মুছে দিয়ে মাছি নিয়ন্ত্রক মলম লাগায়ে দিলে ঘা তাড়াতাড়ি সেরে যাবে
#    
মুখ, পা পরিস্কার করার পর সালফার পাউডার লাগাতে হবে
#    
ভাতের মাড়, ধানের কুড়া, খুদের ভাত এবং বিভিন্ন রকমের সুষম খাবার আক্রান্ত গরুকে কেতে দিতে হবে খাবারের সাথে খনিজ লবণ, ভিটামিন মিশিয়ে খাওয়াতে হবে এত অসুস্থ প্রানীর শরীরের স্বাস্থ্যহানী দূর হয়
#   
ঘা যদি বেশি হয় তবে প্রানী চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গরুর প্রতি কেজি ওজনের জন্য পেনিসিলিন ইনজেকসান ১০-১২  হাজার আন্তর্জাতিক একক প্রয়োগ করতে হবে
#    
দ্বিতীয় পর্যায়ে সংক্রামন দূর করার জন্য ডায়াডিন/ভেসাডিন/স্ট্রেপ্টোপেন এসব এ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন দিতে হবে
#    
এছাড়াও বিভিন্ন বেদনানাশক হিসেবে প্যারাসিটামল ইনজেকশান দেয়া যেতে পারে


No comments:

Post a Comment